ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে। এই দলটি শুধু লাতিন আমেরিকার গর্ব নয়, বরং বিশ্ব ফুটবলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর্জেন্টিনা জাতীয় দল তাদের ঝলমলে পারফরম্যান্স, তারকা খেলোয়াড়দের দক্ষতা এবং অদম্য লড়াইয়ের মাধ্যমে ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে বারবার উপস্থিত হয়েছে। এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো আর্জেন্টিনার ফাইনাল যাত্রার ইতিহাস, জয়-পরাজয়ের গল্প, মূল খেলোয়াড়দের ভূমিকা এবং কিছু অজানা তথ্য। পড়তে থাকুন, কারণ প্রতিটি ফাইনালের পিছনে রয়েছে একটি অনন্য কাহিনী যা ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
আরও জানতে পারেনঃ আর্জেন্টিনার ১১ খেলোয়াড়ের নাম
আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল: ১৯৩০ সালের স্মরণীয় শুরু
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয় উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত প্রথম ফিফা বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার শুরুতেই আসে ১৯৩০ সাল। সেবার তারা গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ফাইনালে পৌঁছায়। প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক উরুগুয়ে। ম্যাচটি হয়ে ওঠে লাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তির লড়াই। আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে হেরে যায়। এটি ছিল তাদের প্রথম ফাইনাল অভিজ্ঞতা, যা দলকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা দেয়। গুইলার্মো স্ট্যাবিলে সেবার টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ৮ গোলে।

এই পরাজয় সত্ত্বেও, আর্জেন্টিনা ফুটবলের ভিত্তি মজবুত করে। ১৯৩৪ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তারা ফাইনালে না পৌঁছালেও, ঘরোয়া লিগ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দাপট দেখায়।
আরও জানতে পারেনঃ নেইমার কত টাকার মালিক ২০২৫
১৯৭৮: ঘরের মাঠে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা
১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করে এবং আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে—এই তালিকায় দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে। কোচ লুইস সিজার মেনোত্তির নেতৃত্বে দলটি অপরাজেয় ছিল। ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিয়মিত সময় ১-১ ড্র হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে মারিও কেম্পেসের দুই গোলসহ ৩-১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। কেম্পেস সেবার গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল দুটোই জিতেন।
এই জয় আর্জেন্টিনাকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ফুটবল জাতিকে একত্রিত করে। ড্যানিয়েল পাসারেলা ক্যাপ্টেন হিসেবে ট্রফি তুলে ধরেন, যা দেশের গর্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।
১৯৮৬: ম্যারাডোনার জাদুকরী ফাইনাল
সবচেয়ে আইকনিক ফাইনালগুলোর একটি। আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে—তৃতীয়বার ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা দলের নেতা ছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘হ্যান্ড অফ গড’ এবং ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’—দুটি গোলই কিংবদন্তি। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-২ জয়ে ম্যারাডোনার অ্যাসিস্ট এবং নেতৃত্ব অপরিহার্য। জর্জ বুরুচাগার বিজয়ী গোলটি ইতিহাসে অমর।
ম্যারাডোনা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। এই শিরোপা আর্জেন্টিনার সোনালী যুগের সাক্ষ্য।
১৯৯০: পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ
চতুর্থ ফাইনাল ১৯৯০ ইতালিতে। আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে—এবারও ম্যারাডোনার নেতৃত্বে, কিন্তু দল দুর্বল ছিল। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে পেনাল্টি বিতর্কের মধ্যে ১-০ গোলে হার। আন্দ্রেয়াস ব্রেমের পেনাল্টি গোলটি নির্ধারক। এটি ছিল আর্জেন্টিনার প্রথম ফাইনাল পরাজয় যা পেনাল্টি ছাড়াই।
তবু, ফাইনালে পৌঁছানোই ছিল অর্জন, বিশেষ করে গোলকিপার সার্জিও গয়কোচিয়ার পেনাল্টি সেভের জন্য।
২০১৪: মেসির কাছাকাছি সাফল্য
পঞ্চমবারের ফাইনাল ২০১৪ ব্রাজিলে। আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে—লিওনেল মেসির নেতৃত্বে দলটি জার্মানির বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে ১-০ গোলে হারে। মারিও গোটজের গোলটি হৃদয়ভঙ্গ করে। মেসি গোল্ডেন বল জিতলেও শিরোপা হাতছাড়া।
গঞ্জালো হিগুয়াইন এবং রদ্রিগো পালাসিওর মিসড চান্সগুলো আক্ষেপের। এটি দেখায় আর্জেন্টিনার ধারাবাহিকতা।
২০২২: মেসির স্বপ্নপূরণ এবং তৃতীয় শিরোপা
সর্বশেষ এবং ষষ্ঠ ফাইনাল ২০২২ কাতারে। আর্জেন্টিনা কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে—এবার ফ্রান্সের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচ। নিয়মিত সময় ২-২, অতিরিক্ত সময় ৩-৩, পেনাল্টিতে ৪-২ জয়। মেসির দুই গোল, এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সেভ—সবকিছু নিখুঁত।
এটি আর্জেন্টিনার তৃতীয় শিরোপা, ম্যারাডোনার উত্তরাধিকারী মেসির জন্য পরিপূর্ণতা।
আর্জেন্টিনা মোট ৬ বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, যার মধ্যে ৩টিতে জয়ী (১৯৭৮, ১৯৮৬, ২০২২) এবং ৩টিতে পরাজিত (১৯৩০, ১৯৯০, ২০১৪)। এই যাত্রা প্রমাণ করে তাদের স্থায়িত্ব। ভবিষ্যতে আরও ফাইনাল আসবে, কারণ নতুন প্রজন্ম প্রস্তুত। ফুটবলের এই গল্প চলমান।
| বছর | প্রতিপক্ষ | ফলাফল | স্কোর | মূল খেলোয়াড় |
|---|---|---|---|---|
| ১৯৩০ | উরুগুয়ে | পরাজিত | ২-৪ | গুইলার্মো স্ট্যাবিলে |
| ১৯৭৮ | নেদারল্যান্ডস | জয়ী | ৩-১ | মারিও কেম্পেস |
| ১৯৮৬ | পশ্চিম জার্মানি | জয়ী | ৩-২ | ডিয়েগো ম্যারাডোনা |
| ১৯৯০ | পশ্চিম জার্মানি | পরাজিত | ০-১ | সার্জিও গয়কোচিয়া |
| ২০১৪ | জার্মানি | পরাজিত | ০-১ | লিওনেল মেসি |
| ২০২২ | ফ্রান্স | জয়ী | ৩-৩ (পেনা. ৪-২) | লিওনেল মেসি |
